কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১ এএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০১:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র নামকরণ যেভাবে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। ছবি : উইন্ডি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। ছবি : উইন্ডি

প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শীতের মৃদু রেশ অনুভূত হওয়া শুরু করেছে। আর এই শীতের আগেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়, যা শীতকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এবার এ ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিধিলি’। এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে মালদ্বীপ। যার অর্থ ‘ফলপ্রসূ কোনো বিষয়’ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

তবে কেবল এই ঝড় নয়, এর পরবর্তী ঝড়গুলোর নামও আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। ২০২০ সালেই আইএমডি মোট ১৬৯টি ঝড়ের নামের একটি তালিকা করে রেখেছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর হয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। এটার নাম দেয় ইরান। ‘মিধিলি’র পরের নাম ঠিক করে রেখেছে মিয়ানমার, যার নাম ‘মিগজাউম’। মিয়ানমারের দেওয়া আগের ঝড় ছিল তাউটে। মিয়ানমারের পরে পালা ওমানের, যারা আগের ঝড়ের নাম দিয়েছিল ‘ইয়াস’। তাদের দেওয়া পরের ঝড়ের নাম ‘রে-মাল’।

এভাবেই পরপর লাইনে আছে পাকিস্তানের ‘আসনা’, কাতারের ‘ডানা’, সৌদি আরবের ‘ফেইনজাল’, শ্রীলঙ্কার ‘শক্তি’, থাইল্যান্ডের ‘মন্থা’, সংযুক্ত আরবের ‘সেন-ইয়ার’, ইয়েমেনের ‘দিতওয়া’।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন

একটা সময় ছিল যখন ঘূর্ণিঝড়ের কোনো নাম থাকত না। আমাদের দেশে ১৯��০ সালে কিংবা ১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো নাম নেই। শুধু আমাদের দেশের নয়, অন্যান্য দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়েরও কোনো নাম থাকত না। তাই এসব ঝড়ের নাম রাখার একটি চল শুরু হয় একপর্যায়ে। কারণ, নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই নাম রাখার চল শুরু। আর এটি করে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও )। ডব্লিউএমও সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে। আরএসএমসি তার সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা অনুমোদন করে আঞ্চলিক কমিটির একটি প্যানেল। তার নাম ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। এর মধ্যে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৮ সালের আরএমএসসি নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করে। এ সময় ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দেয়। নামকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা হয়।

এদিকে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলের ৩৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এ জন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রমের সময় না জানালেও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ‘মিধিলি’ খুলনা ও বরিশালের মাঝখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত রাত থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

ভোরে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৮) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে পরিণত হয়েছে। এটি শুক্রবার ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩० কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জমে উঠেছে ‘হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল’

ছেলের হত্যাকারীকে বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিলেন বাবা

রাবি ছাত্রলীগের ছাউনিতে ছাত্রদলের হালিম ব্যবসা

দাবা থেকে নোবেল : ডেমিস হাসাবিসের অসামান্য জয়

‘আল্লাহ সবগুলো মানুষ নিয়ে গেল’

দলমত ধর্ম যার যার, কিন্তু রাষ্ট্র সবার : তারেক রহমান

টাঙ্গাইলে এক উঠানে মসজিদ-মন্দির

৭ বছর মিষ্টি জান্নাতের জন্য কে অপেক্ষা করছেন? 

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৮৩

টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে ২ হাজার বিঘার ধানক্ষেত

১০

সাহিত্যে নোবেল পাওয়া কে এই হান কাং

১১

অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের কোনো ছাড় নয় : ধর্ম উপদেষ্টা

১২

মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

এনআইডির তথ্য চুরি ও বিক্রি / কারাগারে ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক 

১৪

যে কারণে সাহিত্যে নোবেল পেলেন হান কাং

১৫

দুর্গাপূজা ঘিরে সজাগ রয়েছে র‌্যাব : শহিদুর রহমান

১৬

৬ বছর প্রেমের পর বিয়ে করছেন শিরিন শিলা

১৭

হাসিনাসহ খুনিদের দ্রুত বিচার করতে হবে : এ্যানি

১৮

‘দেশে গুজব ছড়িয়ে স্বৈরাচারের দোসরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে’

১৯

হিজাব পরায় শিক্ষা অফিসারের হেনস্তার শিকার শিক্ষক

২০
X